“ডাকসু আমাদের সাংবিধানিক অধিকার — কেউ তা বাধা দিতে পারে না।”
“আমরা চাই ডাকসু — অবিলম্বে ডাকসু নির্বাচন দিতে হবে।”
“ডাকসু আমাদের অধিকার — সেই অধিকার আদায়ে লড়াই চালিয়ে যাব।”
“গণরুম নয়, চাই গণতান্ত্রিক প্রতিনিধিত্ব — চাই ডাকসু।”
“টেম্পোরারি ব্যবস্থাপনা নয়, চাই স্থায়ী ছাত্র নেতৃত্ব — চাই ডাকসু।”
“দালালদের নয়, চাই শিক্ষার্থীবান্ধব নেতৃত্ব — চাই ডাকসু।”
“চাঁদাবাজি ও অপশাসন নয়, চাই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা — চাই ডাকসু।”
“সন্ত্রাসী ও সহিংস রাজনীতি নয়, চাই গণতান্ত্রিক পরিবেশ — চাই ডাকসু।”
“লেজুড়বৃত্তিমূলক রাজনীতি নয়, চাই স্বাধীন ছাত্র নেতৃত্ব — চাই ডাকসু।”
“ভিআইপি প্রটোকলের ছাত্র রাজনীতি নয়, চাই প্রকৃত শিক্ষার্থী স্বার্থ রক্ষা — চাই ডাকসু।”

অবিলম্বে ডাকসু (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে উপাচার্যের বাসভবনের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, নির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা না হলে ধারাবাহিক কর্মসূচিতে যাওয়া হবে। পাশাপাশি, আগামী বৃহস্পতিবার পুনরায় ভিসি চত্বরে সমবেত হওয়ার ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টায় এ কর্মসূচি পালিত হয়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগানে তাদের দাবি তুলে ধরেন। তারা বলেন:
“ডাকসু আমাদের সাংবিধানিক অধিকার — কেউ তা বাধা দিতে পারে না।”
“চাই ডাকসু, অবিলম্বে ডাকসু নির্বাচন দিতে হবে।”
“ডাকসু আমাদের অধিকার — এই অধিকার আদায়ে লড়াই চলবে।”
“গণরুম নয়, চাই প্রতিনিধিত্ব।”
“দালালি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, প্রটোকল-ভিত্তিক রাজনীতি নয় — চাই স্বচ্ছ, শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক ডাকসু।”
সাইয়েদুজ্জামান নূর আলভী বলেন, “আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের কাছে ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়ে আল্টিমেটাম দিয়েছি। কিন্তু তারা এখনো কোনো ধরনের রূপরেখা দিতে পারেননি। যদি প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে এক মুহূর্তও দেরি করব না।”
তাহমিদ আল মুদাসসির চৌধুরী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নানা সংস্কারের কথা বলছে, কিন্তু শিক্ষার্থীদের সামনে কোনো সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এটি প্রশাসনের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা।”
শিক্ষার্থীদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে ডাকসু নির্বাচন বন্ধ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত ও অংশগ্রহণমূলক নেতৃত্বের সুযোগ ক্রমেই সংকুচিত হয়েছে। অবিলম্বে নির্বাচন না হলে আন্দোলনের পরিধি আরও বিস্তৃত হবে বলে তারা জানিয়েছেন।
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে একটি বিশেষ দল কর্তৃক উত্থাপিত আপত্তির প্রসঙ্গে এক ছাত্রনেতা বলেন, “তারা দাবি করছে, আওয়ামীপন্থী সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করে গঠিত সিন্ডিকেটের অধীনে অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। বাস্তবে এটি একধরনের প্যারাডক্স। কারণ, বিদ্যমান কাঠামোর বাইরে থেকে সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব নয়। অথচ আমরা দেখিয়েছি, এই কাঠামোর মধ্যেই কীভাবে আওয়ামীপন্থী প্রভাবমুক্ত একটি নির্বাচনের পথ তৈরি করা যায়।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মাহিন সরকার বলেন, “হলের শিক্ষার্থীরা এখন নিজেরা তাদের নানান সমস্যা স্ব-উদ্যোগে সমাধান করছে এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনছে। অথচ এই দায়িত্ব পালন করা উচিত ছিল ডাকসুর মাধ্যমে। এটি স্পষ্ট করে দেয়, শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বশীল একটি প্ল্যাটফর্মের কীভাবে প্রয়োজন রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সংস্কারের কথা বলছে, কিন্তু শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া তা কখনোই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। প্রকৃত সংস্কার করতে হলে শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেটকে সম্মান জানিয়ে এগোতে হবে।”
শেষে তিনি জানান, ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে এখন থেকে প্রতিদিন ধারাবাহিক কর্মসূচি পালিত হবে। এর অংশ হিসেবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টায় একটি বিশাল মিছিল সহকারে শিক্ষার্থীরা ভিসি চত্বরে সমবেত হবেন।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
শিক্ষার্থীরা কেন ভিসি ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন?
ডাকসু (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) নির্বাচনের জন্য অবিলম্বে একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
শিক্ষার্থীদের মূল দাবি কী?
তাদের প্রধান দাবি হলো, নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করে অবিলম্বে ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ করতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বমূলক নেতৃত্বের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষার্থীরা কী ধরনের স্লোগান দিয়েছেন?
তারা “ডাকসু চাই, দিতে হবে”, “ডাকসু আমাদের অধিকার”, “চাঁদাবাজি নয়, চাই স্বচ্ছ নেতৃত্ব” ইত্যাদি স্লোগানের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছেন।
আন্দোলনকারীদের পরবর্তী কর্মসূচি কী?
তারা ঘোষণা দিয়েছেন, রোডম্যাপ না দেওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন ধারাবাহিক কর্মসূচি চলবে। এর অংশ হিসেবে আগামীকাল সন্ধ্যায় বৃহৎ মিছিলসহ শিক্ষার্থীরা ভিসি চত্বরে জমায়েত হবেন।
শিক্ষার্থীদের বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোন বিষয়টি সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছে?
তাদের মতে, প্রশাসন সংস্কারের কথা বললেও শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের অংশগ্রহণ বা ম্যান্ডেট ছাড়া সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যা প্রক্রিয়াগতভাবে অন民主 এবং ব্যর্থ।
উপসংহার
ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। তারা স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন—প্রতিনিধিত্বশীল নেতৃত্বের অবকাশ ছাড়া কোনো সংস্কার টেকসই হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিসর পুনঃস্থাপন ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থরক্ষা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে একটি গ্রহণযোগ্য ও সময়বদ্ধ ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রণয়ন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। প্রশাসনের দায়িত্ব এখন শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি শুনে একটি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।