ট্রাম্প বলেছেন যে ইসরায়েল এবং হামাস গাজা শান্তি চুক্তির প্রথম পর্যায়ে সম্মত হয়েছে, যা যুদ্ধবিরতির পথ প্রশস্ত করবে

ট্রাম্প বলেছেন যে ইসরায়েল এবং হামাস গাজা শান্তি চুক্তির প্রথম পর্যায়ে সম্মত হয়েছে, যা যুদ্ধবিরতির পথ প্রশস্ত করবে

প্রায় ২০ জন ইসরায়েলি জিম্মি এখনও জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন—

শৈশবের বন্ধু এভিয়াতার ডেভিড ও গাই গিলবোয়া-দালাল। হামাস তাদের কঙ্কালসার অবস্থায় একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা যায় ডেভিডকে নিজ হাতে হামাস টানেলে নিজের কবর খুঁড়তে বাধ্য করা হচ্ছে।

২৪ বছর বয়সী আলন ওহেল একজন প্রতিভাবান পিয়ানিস্ট। হামাস সম্প্রতি তার বন্দিত্বের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা যায় তার একটি চোখের দৃষ্টি হারিয়েছে বলে তার পরিবার জানিয়েছে।

২৮ বছর বয়সী যমজ ভাই গালি ও জিভ বারম্যান এখনো জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। জিভকে আটক করা হয় যখন তিনি সাবেক ব্রিটিশ-ইসরায়েলি জিম্মি এমিলি দামারিকে রক্ষা করার চেষ্টা করছিলেন। দামারি এ বছরের শুরুতে মুক্তি পান এবং গত রাতে পরিবারের সঙ্গে উদযাপন করেছেন।

নেপালের কৃষি শিক্ষার্থী বিপিন জোশি নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। তার পরিবার গতকাল হামাসের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যা তাকে অপহরণের পরপরই ধারণ করা হয়েছিল। পরিবারটির বিশ্বাস, তিনি এখনও জীবিত আছেন।

৭ অক্টোবর নিহতদের মরদেহ এবং জিম্মি অবস্থায় নিহতদের মরদেহও ফেরত আনার কথা রয়েছে, যদিও হামাস তাদের সবার অবস্থান শনাক্ত করতে পারবে কি না, সে বিষয়ে শঙ্কা রয়েছে।

তাদের মধ্যে রয়েছেন কিশোর সৈনিক ওজ ড্যানিয়েল ও ইতাই চেন।

৮৫ বছর বয়সী আমিরাম কুপার ও আরিয়ে জালমানোভিচ—যাদের একজনের ছেলে জানিয়েছেন, তার পিতাকে গাজা হাসপাতালেই “খুন” করা হয়েছে।

ইনবার হাইমান, যাকে নোভা ফেস্টিভ্যাল থেকে অপহরণ করা হয়েছিল, তার দেহ এখনও ফেরত আসেনি।

মুহাম্মদ এল-আত্রাশ ছিলেন ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একজন বেদুইন সদস্য ও ১৩ সন্তানের পিতা।

তানজানিয়ার কৃষি শিক্ষার্থী জোশুয়া মোলেল ৭ অক্টোবর নিহত হওয়ার পর তার দেহও নিয়ে যাওয়া হয়।

ব্রিটিশ নাগরিক ইওসি শারাবির পরিবারের সদস্যরা তার মরদেহ ফেরতের দাবি জানিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তার ভাই ইলি শারাবি সম্প্রতি বিবিসিকে বলেন, পরিবারের জন্য দাফন সম্পন্ন করা ও মানসিক স্বস্তি পাওয়া অত্যন্ত জরুরি।

দুই বছরের যুদ্ধের পর গাজা জুড়ে মিশ্র অনুভূতি

দুই বছরের বিধ্বংসী যুদ্ধ শেষে গাজার সর্বত্র এখন মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ স্বস্তি পাচ্ছেন বেঁচে থাকার আনন্দে, কেউ আবার শোক আর অনিশ্চয়তায় ডুবে আছেন হারানো স্বজন, ভাঙাচোরা ঘরবাড়ি আর অচেনা ভবিষ্যৎ দেখে।

অনেকের কাছে যুদ্ধের অবসান মানে কিছুটা আশা — পুনর্গঠন ও স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সম্ভাবনা। তবে অন্যদের কাছে এটি কেবল নতুন সংগ্রামের শুরু। খাদ্য, পানি, ওষুধের তীব্র সংকট, ধ্বংসস্তূপে পরিণত অবকাঠামো এবং অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনো তাদের ঘিরে রেখেছে।

শিশুরা খেলায় ফিরতে চাইলেও যুদ্ধের ভয়াবহ স্মৃতি ভুলতে পারছে না। হাসপাতালগুলোতে এখনো ভিড় আহত ও মানসিক আঘাতে ভোগা মানুষের।

আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে, কিন্তু অনেকেই বলছেন, “শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর হলেও গাজার মানুষের মনে শান্তি এখনো আসেনি।”

যুদ্ধ শেষ হলেও গাজার আকাশে এখনো অজানা ভবিষ্যতের ভারি নীরবতা।

‘অবশেষে শান্তি অর্জনযোগ্য বলে মনে হচ্ছে’ – চুক্তিতে বিশ্ব নেতাদের প্রতিক্রিয়া

দীর্ঘ দুই বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটাতে গাজা ও ইসরায়েলের মধ্যে নতুন শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে নেতারা স্বস্তি ও সতর্ক আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, “এই চুক্তি বহু প্রতীক্ষিত মানবিক স্বস্তি এনে দিতে পারে। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো— প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করা।”

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “অবশেষে শান্তি অর্জনযোগ্য বলে মনে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি কার্যকর করতে এবং গাজার পুনর্গঠনে পূর্ণ সহযোগিতা করবে।”

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার বলেছেন, “এই চুক্তি কেবল যুদ্ধের ইতি নয়, বরং নতুন আস্থার সূচনা হতে পারে। টেকসই শান্তির জন্য উভয় পক্ষেরই সংযম ও আন্তরিকতা প্রয়োজন।”

ইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লায়েন এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “ইউরোপ এই ঐতিহাসিক মুহূর্তকে স্বাগত জানায়। এখন প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টা, যাতে গাজার মানুষ নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে পারে।”

অন্যদিকে, তুরস্ক ও কাতার, যারা আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা রেখেছিল, চুক্তিটিকে “ন্যায়ভিত্তিক সমাধানের পথে বড় পদক্ষেপ” বলে অভিহিত করেছে।

তবে কিছু মানবাধিকার সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, “চুক্তি কাগজে স্বাক্ষরিত হলেও প্রকৃত শান্তি নির্ভর করবে বাস্তব পদক্ষেপ ও মানবিক প্রতিশ্রুতির ওপর।”

বিশ্বজুড়ে এখন আশা— এই শান্তিচুক্তি যেন কেবল একটি সাময়িক বিরতি নয়, বরং গাজার দীর্ঘদিনের দুঃস্বপ্নের স্থায়ী অবসান হয়ে ওঠে।

দেখুন: গাজায় এখনও জিম্মিদের সম্পর্কে আমরা যা জানি

দীর্ঘ সংঘাত ও রক্তক্ষয়ের পরও গাজায় এখনও বেশ কয়েকজন ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিক হামাসের হাতে বন্দি বলে বিশ্বাস করা হচ্ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী প্রায় ২০ জন জিম্মি এখনও জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিচে তাদের সম্পর্কে যা জানা গেছে—

এভিয়াতার ডেভিড ও গাই গিলবোয়া-দালাল — শৈশবের বন্ধু এই দুই তরুণের ভিডিও হামাস প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা যায় তারা গুরুতরভাবে অপুষ্ট ও ক্লান্ত। ভিডিওতে ডেভিডকে নিজ হাতে টানেলের ভেতর নিজের কবর খুঁড়তে বাধ্য করা হয়।

আলন ওহেল (২৪) — একজন প্রতিভাবান পিয়ানিস্ট। সম্প্রতি প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, বন্দিত্বের সময় তিনি একটি চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন। তার পরিবার এখনো আশাবাদী, তিনি জীবিত আছেন।

গালি ও জিভ বারম্যান (২৮) — এই যমজ ভাই এখনো জীবিত বলে বিশ্বাস করা হচ্ছে। জিভকে আটক করা হয় যখন তিনি সাবেক ব্রিটিশ–ইসরায়েলি জিম্মি এমিলি দামারিকে রক্ষা করার চেষ্টা করছিলেন। দামারি চলতি বছরের শুরুতে মুক্তি পান।

বিপিন জোশি — নেপালের কৃষি শিক্ষার্থী। তার পরিবার সম্প্রতি হামাসের প্রকাশিত একটি ভিডিও দেখার পর জানিয়েছে, তারা বিশ্বাস করেন তিনি এখনও জীবিত আছেন।

তবে অনেক জিম্মি ইতিমধ্যে নিহত হয়েছেন, এবং তাদের মরদেহ ফেরত আনার প্রক্রিয়া চলছে।

ওজ ড্যানিয়েল ও ইতাই চেন — কিশোর ইসরায়েলি সেনা, ৭ অক্টোবর নিহত হন।
আমিরাম কুপার (৮৫) ও আরিয়ে জালমানোভিচ (৮৫) — পরিবারের দাবি, তাদের গাজা হাসপাতালেই হত্যা করা হয়।
ইনবার হাইমান — নোভা ফেস্টিভ্যাল থেকে অপহৃত এক নারী, যার মরদেহ এখনও ফেরত আসেনি।
মুহাম্মদ এল-আত্রাশ — ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বেদুইন সদস্য ও ১৩ সন্তানের পিতা।
জোশুয়া মোলেল (তানজানিয়া) — কৃষি শিক্ষার্থী; ৭ অক্টোবর নিহত হওয়ার পর তার দেহও নিয়ে যাওয়া হয়।
ইওসি শারাবি — তার পরিবার এখনও মরদেহ ফেরতের দাবি জানিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে প্রচারণা চালাচ্ছে।

সাম্প্রতিক শান্তিচুক্তিতে জিম্মিদের মুক্তি অগ্রাধিকার পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে হামাসের টানেল নেটওয়ার্কের গভীরে আটক এসব মানুষের মধ্যে আসলে কতজন এখনো জীবিত আছেন— সেটিই এখন সবচেয়ে বড় অজানা প্রশ্ন।

টি সাধারণ প্রশ্নোত্তর

ট্রাম্প ঠিক কী ঘোষণা করেছেন?

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইসরায়েল ও হামাস গাজা শান্তি চুক্তির প্রথম পর্যায়ে সম্মত হয়েছে। এই চুক্তি ভবিষ্যতের একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতির ভিত্তি তৈরি করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।

এই “প্রথম পর্যায়” বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

প্রথম পর্যায়ে মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি, সীমিত বন্দি বিনিময় এবং সংঘর্ষপূর্ণ এলাকায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর পরের ধাপে দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সমঝোতার দিকে অগ্রসর হওয়া হবে।

চুক্তির আলোচনায় কারা যুক্ত ছিলেন?

যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিশর মধ্যস্থতাকারী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ট্রাম্প বলেছেন, এই সমঝোতা বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করেই সম্পন্ন হয়েছে।

ইসরায়েল ও হামাসের প্রতিক্রিয়া কী ছিল?

ইসরায়েল চুক্তিটিকে “সতর্ক আশাবাদের পদক্ষেপ” হিসেবে বর্ণনা করেছে। হামাসের এক মুখপাত্র বলেছেন, “যদি ইসরায়েল তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে, তবে এটি স্থায়ী শান্তির পথ খুলে দিতে পারে।”

এর পরবর্তী ধাপ কী হতে পারে?

পরবর্তী ধাপে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দলের উপস্থিতিতে পূর্ণ যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার আলোচনা শুরু হবে। পাশাপাশি গাজার পুনর্গঠন, জিম্মিদের মুক্তি ও মানবিক সহায়তা বৃদ্ধিও আলোচ্যসূচিতে থাকবে।

উপসংহার

ট্রাম্পের ঘোষণায় গাজা শান্তি চুক্তির প্রথম পর্যায়ে ইসরায়েল ও হামাসের সম্মতি নিঃসন্দেহে মধ্যপ্রাচ্যের অস্থির পরিস্থিতিতে এক নতুন আশার আলো জ্বালিয়েছে। তবে এই চুক্তি টেকসই হবে কি না, তা নির্ভর করবে উভয় পক্ষের আন্তরিকতা, মানবিক প্রতিশ্রুতি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর ভূমিকার ওপর। এখন বিশ্বের দৃষ্টি গাজার দিকে— সত্যিকারের শান্তি কি অবশেষে অর্জিত হতে যাচ্ছে

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top