জুলাই বিপ্লবে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং সেবা জরুরি: ইউজিসি

জুলাই বিপ্লবে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং সেবা জরুরি: ইউজিসি

জুলাই-আগস্টের বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা গুরুতর মানসিক আঘাতের শিকার হয়েছেন। এই পরিস্থিতি থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্ত করতে মানসিক স্বাস্থ্য কাউন্সেলিং সেবা প্রদান অত্যন্ত জরুরি।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) এবং ইউনেস্কোর যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়নাধীন ‘সামাজিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা’ প্রকল্পের পিআইসি সভা গতকাল মঙ্গলবার ইউজিসির সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, “জুলাই-আগস্টের বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা ভয়াবহ মানসিক আঘাতের মধ্যে রয়েছেন। তাদের এই সংকটময় অবস্থা থেকে মুক্ত করতে মানসিক স্বাস্থ্য কাউন্সেলিং সেবা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে সুস্থ রাখা ও আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে এই সংকট সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।”

সুরক্ষা’ প্রকল্পের অধীনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতার শিকার দেশের ২২টি পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০,০০০ শিক্ষার্থীকে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা অঞ্চলের নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা এবং তাদের শিক্ষায় পূর্ণ মনোনিবেশ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুজ্জামান মজুমদার, অধ্যাপক ড. মেহজাবিন হক, অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল, ইউজিসি সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলাম, পরিচালক মোছা. জেসমিন পারভীন, অতিরিক্ত পরিচালক মুহম্মদ নাজমুল ইসলাম ও আকরাম আলী খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ তানভীর রহমান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. তাবাসসুম আমিনা, ছাত্র সমন্বয়ক তারেকুল ইসলাম ও উমামা ফাতেমা এবং ইউনেস্কোর প্রোগ্রাম অফিসার রাজু দাসসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন যাচাই করে উপযুক্ত কাউন্সেলিং সেবা প্রদানের পাশাপাশি চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে একটি ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র প্রতিনিধি কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সভায় অধ্যাপক ড. মেহজাবিন হক বলেন, “আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের মনোদৈহিক চাপ তাদের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে রংপুরে আবু সাঈদের মিছিল ও গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে মানসিক রোগ (মেন্টাল ডিজঅর্ডার) সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তাদের ট্রমা থেরাপিসহ যথাযথ চিকিৎসা সহায়তা প্রদান জরুরি। গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেয়া অনেক শিক্ষার্থী হাত-পা, চোখ হারিয়েছে এবং শারীরিক অঙ্গহানীর শিকার হয়েছে। এ ধরনের শিক্ষার্থীরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগে রয়েছে। এই জনগোষ্ঠীর ট্রমা মোকাবিলায় সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নিতে হবে।”

কেন জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং সেবা জরুরি?

জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী অনেক শিক্ষার্থী মানসিক আঘাত ও ট্রমার শিকার হয়েছেন। এই মানসিক চাপ তাদের স্বাভাবিক জীবন এবং শিক্ষাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাই তাদের মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে কাউন্সেলিং সেবা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কোন প্রকল্পের আওতায় এই কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করা হবে?

‘সামাজিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা’ প্রকল্পের অধীনে ইউজিসি ও ইউনেস্কোর যৌথ উদ্যোগে এই কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করা হবে।

এই প্রকল্পের লক্ষ্য কী?

প্রকল্পের লক্ষ্য হলো সহিংসতার শিকার শিক্ষার্থীদের মানসিক আঘাত কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করা, তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা এবং শিক্ষার প্রতি পূর্ণ মনোনিবেশ নিশ্চিত করা।

কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই সেবার আওতায় থাকবে?

ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা অঞ্চলের নির্দিষ্ট পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০,০০০ শিক্ষার্থী এই সেবার আওতায় আসবে।

সভায় কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে?

শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন যাচাই করে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে একটি ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি, কাউন্সেলিং সেবা প্রদান এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র প্রতিনিধি কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এই পদক্ষেপগুলো শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

উপসংহার

জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মানসিক আঘাত কাটিয়ে উঠতে এবং তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে কাউন্সেলিং সেবা প্রদান জরুরি। ইউজিসি ও ইউনেস্কোর যৌথ উদ্যোগে ‘সামাজিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা’ প্রকল্পের মাধ্যমে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সঠিক ফ্রেমওয়ার্ক ও সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎকে আরও আশাব্যঞ্জক ও নিরাপদ করা সম্ভব হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top