
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা সিটিতে একটি বহুতল ভবন ধ্বংস করেছে। টানা দুই দিনে এটি দ্বিতীয় উচ্চ ভবন যেটি লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হলো।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল ক্যাটজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ ভবনটি ধসে পড়ার একটি ভিডিও শেয়ার করে লিখেছেন: “আমরা চলমান আছি।”
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ), যারা গাজায় সামরিক অভিযান জোরদার করছে, জানিয়েছে যে সুসি টাওয়ার হামাস ব্যবহার করছিল। তবে এ দাবি অস্বীকার করেছে ওই সংগঠন।
তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। শনিবারের হামলার আগে ইসরায়েল দক্ষিণের তথাকথিত মানবিক এলাকায় সরে যেতে ফিলিস্তিনিদের উদ্দেশ্যে লিফলেট বিলি করে পুনরায় আহ্বান জানায়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক বার্তায় আইডিএফের আরবি ভাষার মুখপাত্র আভিখাই আদ্রেয়ি গাজার বাসিন্দাদের আহ্বান জানান, “ইতোমধ্যে হাজারো মানুষ যেখানে গেছেন, সেই আল-মাওয়াসিতে আপনারাও চলে যান।” এ এলাকা খান ইউনুস ও উপকূলীয় অঞ্চলের মাঝামাঝি অবস্থিত।
আইডিএফ বারবার দাবি করছে, আল-মাওয়াসিতে গেলে সাধারণ মানুষ চিকিৎসা, পানি ও খাদ্যের সুবিধা পাবেন। তবে জাতিসংঘ বলছে, ওই এলাকার তাঁবু শিবিরগুলো অতিরিক্ত ভিড়ে ভরপুর এবং অনিরাপদ। একই সঙ্গে দক্ষিণের হাসপাতালগুলোতেও রোগীর চাপ সামাল দেওয়া যাচ্ছে না।
মঙ্গলবার আল-মাওয়াসিতে পানি সংগ্রহের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ড্রোন হামলায় পাঁচ শিশুর মৃত্যু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি ড্রোনের আঘাতেই এ ঘটনা ঘটে। তবে আইডিএফ জানিয়েছে, বিষয়টি “পর্যালোচনার অধীনে” রয়েছে।
বিবিসি ভেরিফাই: ইসরায়েল গাজা সিটিতে ডজনখানেক ভবন ধ্বংস করেছে।

সুসি টাওয়ার টানা দুই দিনে ধ্বংস হওয়া দ্বিতীয় বহুতল ভবন। এর আগে শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ফুটেজে দেখা যায়, গাজার আল-রিমাল এলাকায় অবস্থিত মুশতাহা টাওয়ারের নিচতলায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর পুরো ভবনটি ধসে পড়ে।
আইডিএফ জানিয়েছে, সাধারণ নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে তারা “জনসাধারণকে আগাম সতর্কবার্তা প্রদান” এবং “নির্ভুল অস্ত্র ব্যবহার”-সহ বিভিন্ন সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে।
তবে ফিলিস্তিনিরা বলছেন, বাস্তুচ্যুত বহু পরিবার মুশতাহা টাওয়ারে আশ্রয় নিয়েছিল। গাজার সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে “জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির নীতি” বাস্তবায়নের অভিযোগ আনেন।
স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, গত এক মাসে ইসরায়েলি হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞে গাজার বেশ কিছু এলাকায় পুরো মহল্লা সমতল হয়ে গেছে।
গাজার আবাসিক ও বাণিজ্যিক বহুতল ভবনগুলো শহরের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়কে প্রতিনিধিত্ব করে—যা ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অবসান ও স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্নের সঙ্গে জড়িত।
১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তির পর গাজা ও পশ্চিম তীরের কিছু এলাকায় নির্বাসিত ফিলিস্তিনিদের প্রত্যাবর্তনের সুযোগ তৈরি হলে পাঁচতলার বেশি বিশিষ্ট বহুতল ভবনের উত্থান শুরু হয়।
এরপর ১৯৯৪ সালে ইসরায়েল অধিকাংশ এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করলে বিপুল সংখ্যক প্রত্যাবর্তনকারীকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য গাজায় উল্লম্ব সম্প্রসারণ অপরিহার্য হয়ে ওঠে।
তখন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ নির্মাণ খাতে ব্যাপক বিনিয়োগকে উৎসাহিত করে এবং একেকটি মহল্লা সেইসব টাওয়ারের নাম অনুসারে পরিচিতি পেতে থাকে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি নিয়ে হামাসের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনা জুলাই মাসে ভেস্তে যাওয়ার পর গাজা উপত্যকার পুরো নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে তার সরকারের।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, এখনও প্রায় ১০ লাখ মানুষ গাজা সিটিতে অবস্থান করছেন। সংস্থাটি গত মাসে সেখানে দুর্ভিক্ষের ঘোষণা দিয়ে সতর্ক করেছে যে সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকলে তাৎক্ষণিক “বিপর্যয়” নেমে আসতে পারে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে দক্ষিণ ইসরায়েলে চালানো হামলায় প্রায় ১,২০০ জন নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করার পর ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে।
হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৩ হাজার ৭৪৬ জন ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন। এছাড়া যুদ্ধ চলাকালীন অপুষ্টি ও অনাহারে প্রাণ হারিয়েছেন আরও ৩৬৭ জন।
অতিরিক্ত প্রতিবেদন: রুথ কোমারফোর্ড
প্রায়শই খরচ এড়িয়ে যাওয়া
গাজা সিটিতে কোন ভবনটি সর্বশেষ ধ্বংস করা হয়েছে?
সুসি টাওয়ার নামের একটি বহুতল ভবন ধ্বংস করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
এর আগে কোন ভবন ধ্বংস করা হয়েছিল?
এর আগের দিন আল-রিমাল এলাকায় অবস্থিত মুশতাহা টাওয়ার ধসে পড়ে ইসরায়েলি হামলায়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হামলার যৌক্তিকতা কী জানিয়েছে?
আইডিএফ বলেছে, এসব টাওয়ার হামাসের কার্যক্রমে ব্যবহৃত হচ্ছিল।
ফিলিস্তিনিদের প্রতিক্রিয়া কী ছিল?
ফিলিস্তিনিরা দাবি করেছেন, বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলো এসব ভবনে আশ্রয় নিয়েছিল এবং এটিকে তারা “জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির নীতি” বলছেন।
এসব টাওয়ার গাজার জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ?
বহুতল টাওয়ারগুলো গাজার নগরায়ণ, ইতিহাস এবং স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের আশার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।
উপসংহার
গাজা সিটিতে ইসরায়েলি হামলায় ধারাবাহিকভাবে বহুতল ভবন ধ্বংসের ঘটনা কেবল অবকাঠামো নয়, ফিলিস্তিনি জনগণের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও স্বপ্নকেও চূর্ণ করছে। আন্তর্জাতিক মহল যেখানে যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তার ওপর জোর দিচ্ছে, সেখানে এ ধরনের আক্রমণ গাজার সাধারণ মানুষের জীবনকে আরও অনিশ্চিত ও বিপর্যস্ত করে তুলছে।