গাজায় গণহত্যা: বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস বর্জনের ঘোষণা

গাজায় গণহত্যা: বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস বর্জনের ঘোষণা

ইসরায়েলি গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে এবং গাজাবাসীর প্রতি সংহতি প্রদর্শন করে সোমবার দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।

গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে এবং গাজাবাসীর প্রতি সংহতি প্রদর্শন করে আগামীকাল সোমবার বিশ্বব্যাপী হরতাল পালনের আহ্বান জানিয়েছে নিপীড়িত গাজাবাসী। তারা পৃথিবীর সব দেশে একযোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি ও বেসরকারি অফিস-আদালত বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছে।

এ প্রতিবাদে অংশ হিসেবে, দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা গাজাবাসীর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সোমবার ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। তারা এই কর্মসূচির মাধ্যমে ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ আন্দোলন শুরু করেছেন।

রোববার এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই তথ্য জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা এক বিবৃতিতে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য বিশ্বশক্তির সমর্থিত ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর দ্বারা গণহত্যার শিকার গাজার জনগণের প্রতি আমাদের দৃঢ় সমর্থন রয়েছে।”

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরাও একই দাবিতে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তারা বলেন, “গাজার ওপর ইসরায়েলের পৈশাচিক হামলা, শিশু ও সাধারণ মানুষের নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড, চিকিৎসা সেবা না পাওয়া এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের হত্যার ঘটনা মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরম উদাহরণ। অথচ মুসলিম বিশ্ব এ বিষয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।”

ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন। এক বিবৃতিতে তারা জাতিসংঘ, ওআইসি ও অন্যান্য বিশ্বনেতাদের এই বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে কার্যকর অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যাকে একটি মানবিক সংকট ও বিশ্বব্যাপী সবার বিবেকের এক সমষ্টিগত ব্যর্থতা হিসেবে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলেন, “বছরের পর বছর ধরে সবার চোখের সামনেই এই গণহত্যা ঘটে চলেছে। এটি কেবল একটি রাজনৈতিক ইস্যু নয়, বরং এটি একটি মানবিক সংকট। এটি বিশ্বব্যাপী সবার বিবেকের এক সমষ্টিগত ব্যর্থতা।”

ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা বলেছেন, “আমরা গণহত্যার মুখে চুপ থাকতে পারি না এবং থাকবও না।” গাজার নির্যাতিত জনগণের সঙ্গে অটল সংহতি প্রকাশ করে তারা ৭ এপ্রিল, সোমবার বিশ্বব্যাপী ধর্মঘটের ডাকে সাড়া দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তারা জানান, এই দিনে তারা সব শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থগিত রাখবেন। “কোনো ক্লাস নেই, কোনো ল্যাব নেই, কোনো অফিসের কাজ নেই।” তাদের প্রতিবাদ হলো সেই গণহত্যার বিরুদ্ধে তাদের কণ্ঠস্বর, যা তথাকথিত সভ্য বিশ্ব উপেক্ষা করে চলেছে।

এ ছাড়া, ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, ডিআইআইটি বিশ্ববিদ্যালয়, গণবিশ্ববিদ্যালয়, বিইউবিটি ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়, আহসানুল্লাহ ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (অস্ট), কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, নর্থইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিক, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, সাউথ-ইস্ট ইউনিভার্সিটি, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গ্রিন ইউনিভার্সিটি, এআইইউবি, সিটি ইউনিভার্সিটি, নর্দান ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি, আইইউবিএটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সহ আরও অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিবাদ:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি), শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, প্রাইম ইউনিভার্সিটি সহ দেশের নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গাজার জনগণের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেছেন।

বিশ্বব্যাপী ধর্মঘট:

৭ এপ্রিল, সোমবার গাজায় চলমান গণহত্যার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিশ্বব্যাপী ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালত বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।

গণহত্যার প্রতিবাদ:

শিক্ষার্থীরা বলেন, “গাজার নির্যাতিত জনগণের প্রতি আমাদের সংহতি রয়েছে। ইসরায়েলের পৈশাচিক হামলা, শিশুদের হত্যার ঘটনা এবং চিকিৎসা সেবা না পাওয়ার মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো সবার বিবেকের কাছে এক বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান:

শিক্ষার্থীরা জাতিসংঘ, ওআইসি এবং অন্যান্য বিশ্বনেতাদের প্রতি ইসরায়েলি গণহত্যার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন।

সংহতি এবং প্রতিবাদ:

দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিবাদকে “নো ওয়ার্ক, নো স্কুল” কর্মসূচি হিসেবে ঘোষণা করেছেন, যা গণহত্যার বিরুদ্ধে তাদের কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করবে।

উপসংহার

গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জনের ঘোষণা একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিবাদ। তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে এবং গাজার নির্যাতিত জনগণের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিবাদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একাধিক আহ্বান জানাচ্ছেন, যাতে এই বর্বরোচিত হামলা বন্ধ করা হয় এবং মানবাধিকার রক্ষা করা হয়। তাদের এই আন্দোলন বিশ্ববাসীর কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা—সবার উচিত গণহত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এবং নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন না করা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top