৯৯০ কোটি টাকার প্রকল্প বাজেটের মধ্যে একটি কলেজের জন্য ৫০০ কোটি টাকা শুধুমাত্র আসবাবপত্র কেনার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। এটি সাধারণ জনগণের মনে প্রশ্ন তুলতে পারে—কেন একটি কলেজের আসবাবপত্রই প্রকল্প বাজেটের অর্ধেকেরও বেশি অর্থ ব্যয় করবে? নাগরিক হিসেবে আমাদের এ বিষয়ে জানার অধিকার রয়েছে।
এছাড়া, সামগ্রিকভাবে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের দিকেও নজর দেওয়া জরুরি। ২০০৯-১০ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বাজেটের প্রায় ১৪ শতাংশ বরাদ্দ ছিল, কিন্তু বিগত ১৪-১৫ বছরে সেটি কখনোই ১৬ শতাংশ অতিক্রম করেনি। এই বাস্তবতায় একটি কলেজের আসবাবপত্রের পেছনে এত বিশাল অঙ্কের বরাদ্দ প্রশ্নবিদ্ধ হওয়াই স্বাভাবিক।

গত ১৫ বছরে শিক্ষাখাতে বাজেট কতটুকু বৃদ্ধি পেয়েছে?
২০০৯-১০ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের আনুমানিক ১৪ শতাংশ বরাদ্দ ছিল শিক্ষা খাতে। পরবর্তী ১৪-১৫ বছরে এই হার কখনোই ১৬ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়নি। অর্থাৎ, বাজেটের অনুপাতে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের হার প্রায় স্থবির থেকেছে।
কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ যে শিক্ষা খাতে বাজেট বাড়েনি?
একটি দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য মানসম্মত ও বিস্তৃত শিক্ষা অপরিহার্য। বাজেটে নিম্ন বরাদ্দ মানে অবকাঠামো, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, পাঠ্যসামগ্রী, প্রযুক্তি ও গবেষণায় পিছিয়ে থাকা—যার প্রভাব পড়ে প্রজন্মের দক্ষতা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে এটি কতটা পিছিয়ে?
ইউনেস্কোর সুপারিশ অনুযায়ী, একটি দেশকে কমপক্ষে জিডিপির ৪-৬ শতাংশ বা জাতীয় বাজেটের ১৫-২০ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়া উচিত। বাংলাদেশের বাজেট সেই মানদণ্ডে এখনও পৌঁছায়নি।
বরাদ্দ না বাড়ার প্রধান কারণ কী হতে পারে?
এর পেছনে অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, দুর্বল পরিকল্পনা এবং বাজেট বাস্তবায়নের দক্ষতার অভাব অন্যতম কারণ হতে পারে। কখনো কখনো অবকাঠামোগত খাতে অতিরিক্ত ব্যয় (যেমন: একটি কলেজের আসবাবপত্রে ৫০০ কোটি টাকা) শিক্ষার মূল দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দেয়।
এখন কী করা উচিত?
শিক্ষা বাজেট পর্যাপ্ত ও কার্যকরভাবে বাড়ানো
খরচের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা
দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষা পরিকল্পনায় বিনিয়োগ
অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে মূল শিক্ষাগত চাহিদায় গুরুত্ব দেওয়া
উপসংহার
শিক্ষা একটি জাতির উন্নয়নের ভিত্তি, আর সে ভিত্তি তখনই শক্ত হবে যখন তা যথাযথ বিনিয়োগে নিশ্চিত করা হয়। গত ১৫ বছরে জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের হার কখনোই ১৬ শতাংশ অতিক্রম করেনি, যা দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে, একটি একক কলেজের আসবাবপত্রের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া যেমন প্রশ্ন তুলছে, তেমনি এটি বাজেট বরাদ্দের অগ্রাধিকারে স্বচ্ছতা ও যৌক্তিকতার অভাবও তুলে ধরছে।
এখন সময় হয়েছে বাজেট পরিকল্পনায় শিক্ষাকে প্রকৃত অগ্রাধিকার দেওয়ার—স্বল্পমেয়াদী খরচ নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় উন্নয়নের কথা চিন্তা করে। কারণ, শিক্ষায় বিনিয়োগ মানেই ভবিষ্যতে একটি দক্ষ, সচেতন ও প্রগতিশীল সমাজের ভিত্তি গড়ে তোলা।