এনসিপির পদ পেলে শিক্ষকতা ছাড়তেও রাজি

এনসিপির পদ পেলে শিক্ষকতা ছাড়তেও রাজি

নতুন রাজনৈতিক দল “জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)”-তে পদ লাভের আশায় এখন সরকারি স্কুলের শিক্ষকরাও সক্রিয়ভাবে চেষ্টা শুরু করেছেন।

ছাত্রদের উদ্যোগে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল “জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)”-তে পদ লাভের আশায় এবার সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তাদেরই একজন কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার চরনুনখাওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হাফিজুর রহমান জুয়েল।

দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা হাফিজুর সম্প্রতি দল পরিবর্তন করে এনসিপিতে যোগ দিয়েছেন। তবে সরকারি চাকরির বিধি অনুযায়ী, কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী চাকরিতে থাকা অবস্থায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারেন না।

এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার সম্প্রতি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “শিক্ষকরা সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হতে পারেন না। কেউ যুক্ত হলে চাকরিবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এ প্রসঙ্গে শিক্ষক হাফিজুর রহমান জুয়েল বলেন, “খুব শিগগিরই এনসিপির কুড়িগ্রাম জেলা কমিটি গঠিত হবে। আশা করছি, সেখানে ভালো একটি পদ পাবো। পদ পেলে চাকরি ছেড়ে দেবো।”

ছাত্রদের উদ্যোগে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ (এনসিপি)-তে পদ পাওয়ার আশায় এখন দেশের বিভিন্ন জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা রাজনীতির দিকে ঝুঁকছেন। অনেকেই শিক্ষকতা ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন, আবার কেউ কেউ চাকরিতে থেকেই দলে সক্রিয় হচ্ছেন—যা পরিষ্কারভাবে সরকারি চাকরির বিধি পরিপন্থী।

উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এনসিপির স্থানীয় কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে এখন তদবিরে নেমেছেন একাধিক সরকারি শিক্ষক।

তাদের মধ্যে অন্যতম কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার চরনুনখাওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হাফিজুর রহমান জুয়েল। দীর্ঘদিন স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার পর তিনি সম্প্রতি এনসিপিতে যোগ দিয়েছেন। একইভাবে রাজারহাট উপজেলার আবুল কাশেম বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মুনিবুল হক বসুনিয়াও সক্রিয়ভাবে দলীয় পদ পাওয়ার চেষ্টা করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুড়িগ্রামের দুটি উপজেলার আহ্বায়ক বা সভাপতির পদ পেতে এই দুই শিক্ষক জোর তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে সরকারি চাকরিজীবীদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়ানো নিষিদ্ধ—এমনটাই বলছে বাংলাদেশ সরকারের চাকরিবিধি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার সম্প্রতি স্পষ্ট করে বলেন, “শিক্ষকরা রাজনীতিতে জড়াতে পারবেন না। কেউ জড়ালে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তবে হাফিজুর রহমান জুয়েল বলেন, “খুব শিগগির এনসিপির কুড়িগ্রাম জেলা কমিটি হবে। আশা করছি, সেখানে ভালো পদ পাবো। পদ পেলেই চাকরি ছেড়ে দেবো।”

ছাত্রদের নেতৃত্বে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)–তে নেতৃত্বের ভূমিকা নিতে এখন সরব হচ্ছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী ও রাজারহাট উপজেলার দুই সহকারী শিক্ষক এনসিপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিচ্ছেন—যা সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নির্ধারিত আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

নাগেশ্বরী উপজেলার চরনুনখাওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাফিজুর রহমান জুয়েল ও রাজারহাট উপজেলার আবুল কাশেম বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মুনিবুল হক বসুনিয়া বর্তমানে নিজ নিজ উপজেলায় এনসিপির আহ্বায়ক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। তারা এনসিপির কমিটি গঠন, রাজনৈতিক কর্মসূচি ও সমাবেশে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন।

সম্প্রতি কুড়িগ্রামে অনুষ্ঠিত এনসিপির বিভিন্ন উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের কর্মসূচিতে তাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। দলটির সংগঠন বিস্তারে এ দুই শিক্ষক এখন নেতৃত্বের ভূমিকায় রয়েছেন। কুড়িগ্রামের আরও কয়েকজন সরকারি শিক্ষককেও এনসিপির মিছিলে-সমাবেশে দেখা গেছে।

সরকারি চাকরিজীবীদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের বিষয়ে সরকারের বিধিনিষেধ স্পষ্ট। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার সম্প্রতি জানান, “শিক্ষকরা রাজনীতিতে জড়াতে পারবেন না। কেউ জড়ালে চাকরিবিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এ বিষয়ে হাফিজুর রহমান জুয়েল বলেন,
“আমি দীর্ঘদিন রাজনীতি করি। আগে যুবদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। সে সময় ফ্যাসিস্ট আসলাম এমপি আমার বিরুদ্ধে ১২টা মামলা করিয়েছিলেন। এখন পর্যন্ত ১০টি মামলা খারিজ হয়েছে, ২টি বাকি আছে। মামলা শেষ হলেই আমি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে গিয়ে চাকরি ছাড়বো। আমি রাজনীতিতে সম্পূর্ণভাবে সক্রিয় থাকতে চাই।”

যুবদল ছেড়ে এনসিপিতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন,
“আওয়ামী লীগ টানা ১৫-১৬ বছর ক্ষমতায় থেকেও এখন ধ্বংসপ্রাপ্ত। বিএনপির ভবিষ্যতও আমি দেখছি না। তাই ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত এনসিপিতেই আমি সক্রিয় হয়েছি। এই দলের হয়ে নিজের এলাকার মানুষের জন্য কাজ করতে চাই।”

উল্লেখ্য, সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারেন না এবং কর্মরত অবস্থায় কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া আইনত দণ্ডনীয়। এনসিপির কর্মকাণ্ডে এই দুই শিক্ষকের সরাসরি সম্পৃক্ততা সেই নিয়মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

ছাত্রদের উদ্যোগে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)–তে যোগদানের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। কেবল শিক্ষকতা নয়, তারা দলের স্থানীয় নেতৃত্বের দায়িত্বও নিচ্ছেন—যা সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নির্ধারিত আচরণবিধি অনুযায়ী সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী ও রাজারহাট উপজেলার দুই সহকারী শিক্ষক—হাফিজুর রহমান জুয়েল ও মুনিবুল হক বসুনিয়া—বর্তমানে এনসিপির উপজেলা আহ্বায়ক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন এবং দলের কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন।

হাফিজুর রহমান বলেন,

“আমি দীর্ঘদিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আগে যুবদলে ছিলাম। আমার বিরুদ্ধে ১২টি মামলা হয়েছিল, যার ১০টি খারিজ হয়েছে। বাকি দুটি মীমাংসা হলে আমি চাকরি ছেড়ে সম্পূর্ণভাবে এনসিপির রাজনীতিতে যুক্ত হবো।”

একইভাবে মুনিবুল হক বসুনিয়া জানান,

“আমি আগে নাগরিক কমিটিতে ছিলাম, এখন এনসিপিও চালাচ্ছি। এনসিপি এখনো নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায়নি। নিবন্ধন পেলেই সিদ্ধান্ত নেবো—শিক্ষকতা করবো নাকি এনসিপিতে পুরোপুরি থাকবো।”

তালিকায় আরও নাম, নজরদারিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর
এই দুই শিক্ষকই শুধু নয়—কুড়িগ্রামের পাশাপাশি বগুড়া, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলার আরও অন্তত ১০ জন সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক এনসিপিতে যোগদানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পদ পেলে তারা চাকরি ছাড়বেন এবং ভবিষ্যতে স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিতে চান।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তার কাছে এসব শিক্ষকের তালিকাও রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করে উত্তরাঞ্চলের একটি জেলার এক প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন,

“স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপি, জামায়াত এমনকি আওয়ামী লীগের অনেকেই এতদিন রাজনীতিতে জড়িত থাকলেও পদ গ্রহণ করতেন না। এখন এনসিপিতে যারা যাচ্ছেন, তারা সরাসরি পদে বসার চেষ্টা করছেন, তাই বিষয়টি সামনে চলে আসছে।”

চাকরিবিধি বলছে—রাজনীতি নিষিদ্ধ
বাংলাদেশ সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী, চাকরিতে থাকা অবস্থায় কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারেন না, কিংবা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন না।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার সম্প্রতি বলেন,

“শিক্ষকরা রাজনীতিতে জড়ালে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এনসিপির রাজনীতিতে সরকারি শিক্ষকরা প্রকাশ্যে যুক্ত হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা ও বিধি প্রয়োগ নিয়ে।

উত্তরাঞ্চলের চার জেলায় অন্তত ১০ জন শিক্ষক সরাসরি দলে, আরো অনেকে প্রস্তুত; সমাজে প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষক রাজনীতি নিয়ে
ছাত্রদের উদ্যোগে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)–তে যোগ দিতে এখন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। শুধু সমর্থন নয়—তারা সরাসরি দলে পদ গ্রহণ, কমিটি গঠন এবং কর্মসূচি বাস্তবায়নে যুক্ত হচ্ছেন। কেবল কুড়িগ্রামেই নয়—বগুড়া, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলার সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যেও এনসিপিতে যোগদানের প্রবণতা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।

দুই শিক্ষক এখন ‘আহ্বায়ক’, মাঠে সক্রিয় ভূমিকায়
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার চরনুনখাওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হাফিজুর রহমান জুয়েল ও রাজারহাট উপজেলার আবুল কাশেম বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মুনিবুল হক বসুনিয়া নিজেদের যথাক্রমে এনসিপির নাগেশ্বরী ও রাজারহাট উপজেলা আহ্বায়ক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। তারা সম্প্রতি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের একাধিক এনসিপি কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।

হাফিজুর রহমান বলেন,

“আমি দীর্ঘদিন রাজনীতি করি। যুবদলে ছিলাম, ফ্যাসিস্ট আসলাম এমপির সময় আমার নামে ১২টি মামলা হয়। এর ১০টি খারিজ হয়ে গেছে। মামলা শেষ হলেই চাকরি ছাড়বো। আমি এনসিপিতে পুরোপুরি যুক্ত হতে চাই।”

অন্যদিকে মুনিবুল হক জানান,

“আমি আগে নাগরিক কমিটিতে ছিলাম। এখন এনসিপিও চালাচ্ছি। দলটির নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন এখনো হয়নি। নিবন্ধন পেলেই সিদ্ধান্ত নেবো—শিক্ষকতা করবো নাকি রাজনীতি।”

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের হুঁশিয়ারি
চাকরি থাকতে রাজনৈতিক পদ নেওয়া সরাসরি বিধি লঙ্ঘন। এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন,

“কেউ চাকরি ছাড়তে চাইলে ঠেকানোর উপায় নেই। তবে চাকরিতে থেকে কেউ রাজনীতিতে জড়ালে, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো বাড়তি সুবিধা দেওয়া হবে না।”

এনসিপির পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা
বিষয়টি নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন,

“আমরা এখনো কোনো জেলা বা উপজেলায় অফিসিয়াল কমিটি দেইনি। প্রক্রিয়া চলছে। হয়তো পুরনো নাগরিক কমিটির সদস্যরা প্রাথমিকভাবে যুক্ত হয়েছেন। এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়নি।”

উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় শিক্ষক রাজনীতিতে সক্রিয়
কুড়িগ্রাম ছাড়াও উত্তরাঞ্চলের বগুড়া, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ে অন্তত ১০ জন সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক এনসিপিতে সক্রিয় রয়েছেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট জেলা পর্যায়ের প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা। তারা পদ পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন এবং পরে স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন।

শিক্ষক রাজনীতি নিয়ে সমাজে উদ্বেগ, অতীতের চেয়ে ভিন্ন বাস্তবতা
শিক্ষকদের সরাসরি রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নতুন নয়, তবে সাম্প্রতিক প্রবণতা অতীতের তুলনায় অনেক বেশি প্রকাশ্য ও সংঘাতপূর্ণ। কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর ছাত্র রাজনীতি নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ। শিক্ষক রাজনীতি নিয়েও চলছে ব্যাপক আলোচনা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিশিষ্টজনরা মনে করেন,

“আগে শিক্ষকেরা রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী থাকলেও প্রশাসনিক দায়িত্ব বা দলে পদ নেওয়া থেকে বিরত থাকতেন। এখন অনেকে সরাসরি দলীয় পদে বসছেন। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্কে দূরত্ব বাড়ছে।”

তাদের দাবি, রাজনৈতিক দলে পদ গ্রহণকারী শিক্ষকদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অপসারণ জরুরি। তা না হলে শিক্ষা ব্যবস্থা দলীয়করণ ও পক্ষপাতদুষ্টতার ঝুঁকিতে পড়বে।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন

এনসিপি কী এবং কেন এত আলোচনা হচ্ছে এখন?

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) হলো ছাত্রদের নেতৃত্বে গঠিত নতুন একটি রাজনৈতিক দল, যার নেতৃত্ব কাঠামো গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে কুড়িগ্রামসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এই দলে যোগ দিচ্ছেন এবং পদ পাওয়ার আশায় সক্রিয় হচ্ছেন—এতেই মূল বিতর্ক।

কোন শিক্ষকরা এনসিপির পদ পেতে সক্রিয়?

কুড়িগ্রামের হাফিজুর রহমান জুয়েল (চরনুনখাওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়) ও মুনিবুল হক বসুনিয়া (আবুল কাশেম বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়) নিজ নিজ উপজেলায় এনসিপির আহ্বায়ক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। তারা সরাসরি কমিটি গঠন ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।

সরকারি চাকরিজীবী হয়ে রাজনীতি করা কি বৈধ?

না। সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী, চাকরিতে থাকা অবস্থায় কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী রাজনৈতিক দলে সদস্য হতে পারেন না বা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারেন না। এ ধরনের কর্মকাণ্ড চাকরিবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অবস্থান কী?

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান স্পষ্টভাবে বলেছেন,

“কেউ চাকরি ছেড়ে রাজনীতি করতে চাইলে সেটা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, কিন্তু চাকরিতে থেকেই রাজনৈতিক দলে পদ গ্রহণ করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

শিক্ষকরা কেন এনসিপিকে বেছে নিচ্ছেন?

একাধিক শিক্ষক দাবি করেছেন, বিএনপি বা আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সম্ভাবনা নেই বলে তারা ‘চব্বিশের অভ্যুত্থান’-পরবর্তী গঠিত এনসিপিকেই ভবিষ্যতের দল হিসেবে দেখছেন। অনেকে জানিয়েছেন, তারা এনসিপিতে ভালো পদ পেলে শিক্ষকতা ছেড়ে পুরোদমে রাজনীতি করবেন এবং ভবিষ্যতে স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন।

উপসংহার

সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের একটি অংশের সরাসরি রাজনৈতিক দলে পদপ্রাপ্তির চেষ্টা শুধু চাকরিবিধির লঙ্ঘনই নয়, বরং এটি শিক্ষা খাতের নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য এক গুরুতর হুমকি। এনসিপির মতো একটি নবগঠিত রাজনৈতিক দলে শিক্ষকদের প্রকাশ্য সক্রিয়তা ভবিষ্যতে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ও নীতিনৈতিকতার প্রশ্ন তোলে।

যেখানে একদিকে সরকার শিক্ষক রাজনীতিতে নিষেধাজ্ঞা কঠোর করছে, অন্যদিকে কিছু শিক্ষক রাজনৈতিক পদ পাওয়ার আশায় চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন—এটি স্পষ্ট করে দেয়, একটি বড় সামাজিক ও প্রশাসনিক দ্বিধার মধ্যে রয়েছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা।

অতএব, প্রয়োজন ত্বরিত নীতি বাস্তবায়ন ও তদারকি, যেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাব হ্রাস পায় এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক নিরপেক্ষ ও গঠনমূলক থাকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top