পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শঙ্কা থাকলেও নির্ধারিত সময়েই পরীক্ষা শুরু হবে। তবে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এজন্য অনানুষ্ঠানিকভাবে একাধিক বিকল্প পরিকল্পনাও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

আগামী ২৬ জুন শুরু হতে যাচ্ছে ২০২৪ সালের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা। এ পরীক্ষাকে সামনে রেখে করোনা ও ডেঙ্গু সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ বাড়ছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে।
শনিবার বেলা ১২টার কিছু পরে রাজধানীর শাহবাগে কয়েকজন পরীক্ষার্থী কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই মানববন্ধন ও মিছিল করেন, পরীক্ষার সময়সূচি পেছানোর দাবিতে।
এ বিষয়ে পরীক্ষার আয়োজনে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড ও কর্তৃপক্ষ জানায়, পরীক্ষা নির্ধারিত সময়েই শুরু হবে, যদিও সংক্রমণ পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে অবস্থা বিবেচনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কর্মকর্তারা জানান, পরিস্থিতির জন্য একাধিক বিকল্প পরিকল্পনাও অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
করোনা ও ডেঙ্গু সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি সত্ত্বেও ২৬ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা বোর্ড ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, “এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা তরুণ, তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিরাপদ হবে। হাত ধোয়া, মাস্ক পরা ও জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”
শিক্ষা বোর্ডের প্রস্তুতি ও অবস্থান
১১টি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকরা দৈনিক আমাদের বারতাকে জানান, পরীক্ষা পেছানোর কোনো সিদ্ধান্ত নেই। উচ্চ মাধ্যমিকে বিষয় বেশি হওয়ায় সময়সীমার মধ্যে পরীক্ষা শেষ করা জরুরি। পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজন হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এবং একাধিক বিকল্প পরিকল্পনা রাখা হচ্ছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার বলেন, “ডেঙ্গু ও করোনা নিয়ে উদ্বেগ আছে, তবে আমাদের হাতে নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।”
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউনুস আলী সিদ্দিকী বলেন, “বর্তমানে সংক্রমণের হার পরীক্ষার প্রতিবন্ধক নয়। মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে, আসন বিন্যাসে সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকবে।”
তিনি আরও জানান, ১৮ জুন কেন্দ্র সচিবদের সঙ্গে সভায় স্বাস্থ্যবিধি মানা ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় নিয়ে আলোচনা হবে, এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নির্দেশনা প্রচার করা হবে।
ডেঙ্গু ও করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি
সরকারি তথ্যমতে, এ বছর এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত ২৫৩ জন, মৃত্যু ৩ জন। অন্যদিকে, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৫,৪৭০ জন, মৃত্যু ২৮ জন।
এই দুই রোগের সংক্রমণ একসাথে বাড়তে থাকায় অভিভাবক ও শিক্ষকদের মাঝে উদ্বেগ বাড়ছে।
পরীক্ষাকেন্দ্র ও অভিভাবকদের দাবি
প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ৫১ হাজার শিক্ষার্থী ২,৭৯৭টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেবে। অনেক অভিভাবক পরীক্ষা দ্রুত শেষ করতে কেন্দ্র সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছেন।
রাজধানীর হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক অভিভাবক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, “হলিক্রস, ভিকারুননিসা বা নটর ডেম কলেজে কেন্দ্র নেই। সরকার চাইলে এসব বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও কেন্দ্র দিয়ে পরীক্ষার চাপ কমাতে পারে।”
শিক্ষকদের উদ্বেগ
কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছেন, নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে কেন্দ্র হওয়ায় ডিউটি করা বাধ্যতামূলক হলেও তারা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তিন ঘণ্টার পরীক্ষা হলেও শিক্ষক-পরীক্ষার্থীদের বহু আগে কেন্দ্রে আসতে হয়, যেখানে ভিড়ের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মানা কঠিন।
পরবর্তী করণীয়
ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড জানিয়েছে, তাদের সব প্রস্তুতি শেষ। আজ রোববার অফিস খোলার পর আন্তঃবোর্ড বৈঠকে পরীক্ষাসংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
কেন এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোর দাবি উঠেছে?
করোনা ও ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়ায় অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক পরীক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন। স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনায় এনে পরীক্ষার সময় পেছানোর দাবি জানানো হয়েছে।
শাহবাগে কবে এবং কী ধরনের আন্দোলন হয়েছে?
শনিবার (তারিখ অনুযায়ী), বেলা ১২টার কিছু পর রাজধানীর শাহবাগে কয়েকজন পরীক্ষার্থী মানববন্ধন ও মিছিল করে পরীক্ষা পেছানোর দাবি তোলেন। কর্মসূচিটি ছিল অঘোষিত ও স্বতঃস্ফূর্ত।
কর্তৃপক্ষ কী বলছে?
১১টি শিক্ষা বোর্ড জানিয়েছে, পরীক্ষা নির্ধারিত সময়েই শুরু হবে (২৬ জুন)। তবে পরিস্থিতি খারাপ হলে ‘অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা’ নেওয়া হবে। বিকল্প পরিকল্পনাও অনানুষ্ঠানিকভাবে রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অবস্থান কী?
স্বাস্থ্য মহাপরিচালক ডা. আবু জাফর বলেন, শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে ঝুঁকি কম। মাস্ক পরা, হাত ধোয়া ও ভিড় এড়িয়ে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ভবিষ্যতে কী হতে পারে?
১৮ জুন কেন্দ্র সচিবদের সভায় স্বাস্থ্যবিধি ও প্রতিরোধ পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে। পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে পরীক্ষার ধরন, সময় বা কেন্দ্রসংখ্যা নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।
উপসংহার
শাহবাগে শিক্ষার্থীদের মিছিল ও মানববন্ধন প্রমাণ করে, এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে করোনা ও ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে বাস্তব উদ্বেগ রয়েছে। যদিও শিক্ষা বোর্ডগুলো নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল, তবে জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাদের অন্যতম দায়িত্ব।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা আয়োজন যেমন জরুরি, তেমনি প্রয়োজন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের উদ্বেগকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা। পরীক্ষার নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে কেন্দ্রভিত্তিক প্রস্তুতি ও বিকল্প পরিকল্পনাগুলো যেন শুধু কাগজে না থেকে বাস্তবায়নেও প্রতিফলিত হয়—সেটাই এখন সবচেয়ে জরুরি।