“এপ্রিল মাসের বেতন সংক্রান্ত প্রস্তাব মে মাসের শুরুতেই মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করা হবে।”

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের EFT-র মাধ্যমে ডিসেম্বরের সপ্তম ধাপের বেতন প্রস্তাব আগামী সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হতে পারে। একইসঙ্গে এপ্রিল মাসের বেতন সংক্রান্ত প্রস্তাব মে মাসের শুরুতে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
সূত্র জানায়, যেসব শিক্ষক-কর্মচারী তথ্য সংশোধন এবং প্রোফাইল হালনাগাদ করেছেন, তারা বর্তমানে ডিসেম্বরের সপ্তম ধাপে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। এছাড়া ষষ্ঠ ধাপে বাদ পড়া কিছু শিক্ষক-কর্মচারীকেও সপ্তম ধাপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এই দুটি ধাপের কাজ শেষ হওয়ার পর, কর্মকর্তারা আসন্ন ঈদ উপলক্ষে শিক্ষকদের বেতন এবং উৎসব ভাতা নিয়ে কাজ শুরু করবেন। তবে এ বিষয়ে এখনই কিছু বলতে নারাজ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এর আগে, ২৭ মার্চ মন্ত্রণালয় থেকে ষষ্ঠ ধাপের বেতন প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই ধাপে মোট ১০,১১৩ জন শিক্ষক ও কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এর মধ্যে ৭,৮১৯ জন স্কুল পর্যায়ের এবং ২,২৯৪ জন কলেজ পর্যায়ের শিক্ষক-কর্মচারী ছিলেন। জানা গেছে, এ ধাপে যারা তথ্য সংশোধন ও প্রোফাইল আপডেট করেছিলেন, তারাও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
তাদের বেতন-ভাতা সরকারি কোষাগার থেকে ছাড় হলেও তা রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংকের মাধ্যমে ‘অ্যানালগ পদ্ধতিতে’ বিতরণ করা হতো। ফলে শিক্ষকদের ভোগান্তির শেষ ছিল না। বেতন-ভাতা ছাড়ের জন্য একাধিক ধাপে অনুমোদনসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হতো, যার ফলে অনেক সময়ই নির্ধারিত সময়ে বেতন-ভাতা পৌঁছাত না।
অনেক ক্ষেত্রে আগের মাসের বেতন পাওয়া যেত পরের মাসের ১০ তারিখের পর। এই দীর্ঘসূত্রতা ও দুর্ভোগ লাঘবে EFT পদ্ধতিতে বেতন প্রদান কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা বাস্তবায়িত হলে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা সময়মতো বেতন-ভাতা পেতে শুরু করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (EFT) পদ্ধতিতে বেতন-ভাতা প্রাপ্তির ব্যবস্থা করা। এই পরিস্থিতির উত্তরণে, গত ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় EFT পদ্ধতিতে বেসরকারি শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত বেতন-ভাতা প্রদান শুরুর ঘোষণা দেয়।
প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলকভাবে বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল ও কলেজের ২০৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীর অক্টোবর মাসের এমপিও EFT-এর মাধ্যমে ছাড় করা হয়। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি, প্রথম ধাপে ১ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী তাদের বেতন-ভাতার সরকারি অংশ EFT-র মাধ্যমে পান।
এরপর দ্বিতীয় ধাপে আরও ৬৭ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন EFT-র মাধ্যমে ছাড় করা হয়। ধাপে ধাপে এই কার্যক্রম সম্প্রসারণের মাধ্যমে সকল এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীকে EFT ব্যবস্থার আওতায় আনার লক্ষ্যে কাজ করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
বর্তমানে কোন ধাপের এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা ইএফটি সুবিধা পাচ্ছেন?
বর্তমানে ডিসেম্বর মাসের সপ্তম ধাপে থাকা শিক্ষক-কর্মচারীরা ইএফটি পদ্ধতিতে বেতন পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। তথ্য সংশোধন ও প্রোফাইল আপডেট করা শিক্ষকরা এবং ষষ্ঠ ধাপে বাদ পড়া কিছুজন এবার অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
এপ্রিল মাসের বেতন কবে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে?
এপ্রিল মাসের বেতনের প্রস্তাব মে মাসের শুরুতেই মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে মাউশি সূত্রে জানা গেছে।
ঈদের বোনাস ও উৎসব ভাতা কী সময় আসবে?
সপ্তম ধাপ ও এপ্রিলের বেতন কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর, ঈদের বেতন ও উৎসব ভাতা নিয়ে কাজ শুরু করবেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।
ইএফটি সুবিধা কবে চালু হয়?
গত ৫ অক্টোবর, বিশ্ব শিক্ষক দিবসে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইএফটি পদ্ধতিতে বেতন প্রদানের ঘোষণা দেয়।
প্রথম ধাপে ২০৯ জন, দ্বিতীয় ধাপে ১ লাখ ৮৯ হাজার এবং তৃতীয় ধাপে আরও ৬৭ হাজার শিক্ষক ইএফটি সুবিধা পেয়েছেন।
ইএফটি কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ইতিপূর্বে বেতন-ভাতা ‘অ্যানালগ পদ্ধতিতে’ চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণ হতো, যা ছিল সময়সাপেক্ষ ও জটিল। EFT চালু হওয়ায় শিক্ষকদের ভোগান্তি কমবে এবং সময়মতো বেতন-ভাতা পাওয়া যাবে।
উপসংহার
ইএফটি পদ্ধতিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান কার্যক্রম নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি শুধু প্রশাসনিক কার্যক্রমকে ডিজিটাল ও স্বচ্ছ করবে না, বরং শিক্ষক সমাজের দীর্ঘদিনের ভোগান্তিরও অবসান ঘটাবে। সপ্তম ধাপের বেতন প্রক্রিয়া এবং এপ্রিল মাসের বেতন প্রস্তাব সময়মতো মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে, আসন্ন ঈদুল আজহার আগে শিক্ষক-কর্মচারীরা সুষ্ঠুভাবে বেতন ও উৎসব ভাতা পাওয়ার আশায় থাকবেন।
এটি শুধু আর্থিক স্বস্তি নয়, বরং শিক্ষকদের মর্যাদা ও প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার পথেও এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।




