আন্দোলনের হুঁশিয়ারি কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের

আন্দোলনের হুঁশিয়ারি কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের

আগামী ২৯ জুলাইয়ের মধ্যে ১৭ জুলাইয়ের পরিপত্র বাতিল করে বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন ও সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে পুনরায় পঞ্চম শ্রেণির সরকারি প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার জন্য সংশোধিত পরিপত্র জারি করার দাবি জানানো হচ্ছে। উক্ত দাবির বাস্তবায়ন না হলে আগামী ৩০ জুলাই দেশব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে।

প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের সুযোগ না দিলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে কিন্ডারগার্টেন ঐক্য পরিষদ। তারা জানিয়েছে, আগামী ২৯ জুলাইয়ের মধ্যে ১৭ জুলাইয়ের পরিপত্র বাতিল করে বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন ও সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে পুনরায় পরিপত্র জারির দাবি জানানো হয়েছে।

এই সময়সীমার মধ্যে দাবি পূরণ না হলে, ৩০ জুলাই দেশব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি এবং পরবর্তী পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হবে বলেও পরিষদ ঘোষণা দিয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিক আন্দোলনের প্রস্তুতির কথাও জানানো হয়।

বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি উত্থাপন করেন কিন্ডারগার্টেন ঐক্য পরিষদের শিক্ষকবৃন্দ।

তারা বলেন, দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত অনেকেই কিন্ডারগার্টেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। অথচ বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, যা একটি চরম বৈষম্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত।

তারা আরও অভিযোগ করেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরও একটি গোষ্ঠী দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে। তারই অংশ হিসেবে সবার জন্য উন্মুক্ত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও ২০২২ সালের বৃত্তি পরীক্ষার মতো আয়োজনে পরিবর্তন এনে শুধুমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয় ও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি পরীক্ষার সুযোগ সীমিত করা হয়েছে। কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীদের এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানান বক্তারা।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য ২০২৫ সালের বৃত্তি পরীক্ষা বিষয়ে গত ১৭ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর একটি পরিপত্র জারি করেছে। এই পরিপত্র অনুযায়ী, শুধুমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয় এবং সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পঞ্চম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। এর ফলে বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন ও সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরা এই পরীক্ষার বাইরে থাকছে।

কিন্ডারগার্টেন ঐক্য পরিষদ এই সিদ্ধান্তকে ‘চরম বৈষম্য ও প্রতারণা’ বলে আখ্যা দিয়েছে। তারা বলেন, “এক দেশে দুই ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা মেনে নেওয়া যায় না। এটি একটি বড় ধরনের বৈষম্য, যা শিক্ষার মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী।”

সংগঠনের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, “বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন ও সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সন্তানেরা অধ্যয়ন করে। এই পরিপত্র জারির মাধ্যমে লক্ষাধিক শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। কোমলমতি শিশুদের শিক্ষা অধিকারে এই হস্তক্ষেপ দেশের সচেতন নাগরিক সমাজ কিছুতেই মেনে নেবে না।”

এ বিষয়ে তারা প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি পেশ করেছে এবং তার অনুলিপি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, সচিব ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছেও প্রেরণ করা হয়েছে।

তারা দাবি জানিয়েছে, আগামী ২৯ জুলাইয়ের মধ্যে এই বৈষম্যমূলক পরিপত্র বাতিল করে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। তা না হলে ৩০ জুলাই দেশব্যাপী মানববন্ধন ও পরবর্তীতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ঘেরাও কর্মসূচি পালিত হবে।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন

কেন আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে কিন্ডারগার্টেন ঐক্য পরিষদ?

১৭ জুলাইয়ের পরিপত্র অনুযায়ী, প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় শুধুমাত্র সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীরা বাদ পড়ায় সংগঠনটি এই বৈষম্যের প্রতিবাদে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

তাদের মূল দাবি কী?

তারা দাবি জানিয়েছে, আগামী ২৯ জুলাইয়ের মধ্যে ১৭ জুলাইয়ের পরিপত্র বাতিল করে কিন্ডারগার্টেন ও সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে পুনরায় বৃত্তি পরীক্ষার পরিপত্র জারি করতে হবে।

দাবি মানা না হলে তারা কী পদক্ষেপ নেবে?

দাবি না মানা হলে ৩০ জুলাই সারাদেশে মানববন্ধন এবং পরবর্তীতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ঘেরাও কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দিয়েছে তারা।

এই পরিপত্রে কী ধরনের বৈষম্যের অভিযোগ আনা হয়েছে?

কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকরা বলছেন, এক দেশে দুই রকম নিয়ম চালু করা একটি চরম বৈষম্য এবং মৌলিক শিক্ষাধিকার থেকে একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সন্তানদের বঞ্চিত করার নামান্তর।

এর আগেও কি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে?

হ্যাঁ, এর আগে তারা প্রধান উপদেষ্টা ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছে।

উপসংহার

কিন্ডারগার্টেন ও সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া একটি স্পষ্ট বৈষম্যের উদাহরণ, যা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বৈসাদৃশ্য সৃষ্টি করছে। শিক্ষার সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হলে সব শ্রেণির শিক্ষার্থীকে সমানভাবে মূল্যায়নের সুযোগ দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা না করে, তাহলে শিক্ষক-অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ আরও বাড়বে এবং পরিস্থিতি অস্থির হয়ে উঠতে পারে। তাই ন্যায়সংগত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষানীতির প্রয়োগ সময়ের দাবি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top